সবুজ সিলেট ডেস্ক
তখন গভীর রাত। চারদিকে সুনসান নীরবতা। রাজধানীর গুলিস্তানে মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের মূল গেটের সামনে পড়ে আছে একটি নিথর দেহ। একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছেন লোকটার স্ত্রী। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে কাছে যাচ্ছেন না। অশ্রুমাখা চোখে অসহায় নারীটি এদিক ওদিক তাকিয়ে আছেন।
সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রউফ বাহাদুরের নজরে পড়ে ঘটনাটি। যারা করোনা নিয়ে কাজ করছে-এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফোন করেন তিনি। তবে তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশে নিজেই উদ্যোগী হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি।
ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এটি ছিল শুক্রবার (১ মে) রাতের ঘটনা। আজ রোববার জানা যায় লোকটির করোনা পজিটিভ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই লোটির নাম মো. ইসরাফিল (৫২)। বাড়ি বরিশালের আগাইলজরা থানায়। বাবা আইয়ুব আলী। ইসরাফিলের লাশ এখনও ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আছে। পল্টন মডেল থানার সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের (পুলিশ ফাড়ি) এসআই মো. আব্দুর রউফ বাহাদুর ও এসআই সোলায়মান গাজী তাকে মেডিকেলে নেন।
এসআই আবদুর রউফ বাহাদুর বলেন, ‘লোকটাকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আমি অনেক জায়গায় ফোন করি, যারা করোনা নিয়ে কাজ করছে তাদের সঙ্গে। তবে অনেক রাত হওয়ায় কোনো সাহায্য পাইনি। পরবর্তীতে আমার সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে নিজের আর্থিক ব্যবস্থায় লাশ ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার ব্যবস্থা করি। আজকে রিপোর্ট পাই তিনি করোনায় মারা গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘লোকটার স্ত্রী আছেন। তাকে নিদিষ্ট একটি জায়গায় খাবারের ব্যবস্থা করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। পরে মৃত ব্যক্তির ভাইকে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি।’
এ বিষয়ে মৃত ব্যক্তির ভাই রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ভাই অনেকক্ষণ রাস্তায় পড়েছিল। কেউ ভয়ে কাছে যায়নি। পুলিশ স্যার তাকে হাসপাতালে নেয়। আমাদের খবর দেয়। এখন লাশ দেশে নিয়ে যাবার মতো টাকা নেই আমাদের। তাই মেডিকেলে বসে আছি। শুনলাম, সরকারই দাফনের ব্যবস্থ করবে।’