স্পোর্টস ডেস্ক
মানজারুল ইসলাম রানা, খুলনায় জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার এক সময় ব্যাট-বলের নৈপুণ্য দিয়ে মানুষের মন কেড়েছিলেন। ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারালে রানা হতে পারতেন নিজের সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। প্রিয় এই বন্ধুর স্মৃতি আজও মনে পড়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার।
সোমবার রাতে মাশরাফির বিন মুর্তজার সঙ্গে তামিম ইকবালের ফেসবুক আড্ডায় উঠে আসেন মানজারুল ইসলাম রানাও। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনই নিহত হন তিনি। সেদিনের কান্নাভেজা স্মৃতি নিয়ে ভারত বধের মিশনে নেমেছিল বাংলাদেশ। মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিং আর তামিম-সাকিব-মুশফিকের হাফসেঞ্চুরিতে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা।
সেদিন রানার মৃত্যু শোককে বুকে নিয়েই বল হাতে আগুন ঝরিয়েছিলেন মাশরাফি। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’-এর তোপে ভারতের বিশ্বখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছিল ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালে। শুরুতেই ইনকাট করে বীরেন্দর শেবাগের উইকেট তুলে নেন মাশরাফি।
লাইভ আড্ডায় মাশরাফিকে তামিমের প্রশ্নটা ছিল- ‘২০০৭ বিশ্বকাপে ম্যাচের ১০ দিন আগে আপনি বলেছিলেন, বীরেন্দ্র শেবাগকে ইনকাট করে বোল্ড করবেন। সত্যি-ই তাই করেছিলেন। ১০দিন আগে এমন অনুমান করা কী করে সম্ভব?’
ধীরস্থিরভাবে মাশরাফি জানালেন, ‘এর উত্তর তো তুই জানিস, কত ম্যাচে আমি তোকে বলেছি, আজকে কিছু একটা হবে। ওই ম্যাচের আগে আমার কাছে তেমন কিছুই মনে হচ্ছিল। সত্যটা হচ্ছে ভেতর থেকে মানুষ অনেক কিছু চাইলে কখনো কখনো হয়ে যায়। ওই একটা কারণ ছিল।’
এর পরই মাশরাফি চলে গেলেন রানার প্রসঙ্গে, ‘তোরতো নিশ্চয়ই মনে আছে, ম্যাচের আগের দিন মানজারুল রানা মারা গেলো। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা সবাই আলোচনা করছিলাম, আমাদের ম্যাচটি জিততে হবে। মনও বলছিল এমন কিছু হতে পারে! রানা যখন মারা যায়, আমরা সবাই অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলাম। এমনকি ডেভ হোয়াটমোর বিদেশি কোচ, উনিও ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন।’
তিনি আরও যোগ করে বলেছেন, ‘আমরা তো দূরে, ওর জানাজা পড়তে পারছিলাম না। ওর জন্য কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। ওইদিন যে যা কিছু করতে চেয়েছে, সবকিছু মনের মতো করেই হয়েছে। এমনকি ওই উইকেটে টসে হেরেও ফিল্ডিং পেয়েছিলাম। দিনটি আমাদের ছিল, এর পাশাপাশি রানাও ছিল।’
মাশরাফি কথা শেষ করতেই তামিম জানালেন, সবার আগে তিনিই রানার মৃত্যু সংবাদটি সবাইকে জানিয়েছিলেন, ‘ভাইয়া (নাফিস ইকবাল) সকাল বেলা ফোন করে জানিয়েছিল, রানা ভাই মারা গেছেন। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমি সবাইকে জানিয়েছি। আমরা সবাই করিডোরে কান্না করছিলাম।’
তামিমের কথা শুনে খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে যান মাশরাফি। পুরনো স্মৃতি মনে পড়তে থাকে তার। কারণ মাশরাফির রুমমেট ছিলেন রানা। অন্ধকার ঘরে ঘুমাতে পারেন না মাশরাফি, এদিকে রানা আলো না নিভিয়ে ঘুমাতে পারেন না। সেই গল্প শোনাতে গিয়ে আবেগের ভেলায় ভাসলেন সাবেক অধিনায়ক, ‘আমিতো ওর রুমমেট ছিলাম, রানা আমি নাফিস একসঙ্গে খেতে যেতাম। ওর একটা অভ্যাস ছিল, আলোতে ঘুমাতে পারতো না। আর আমি বাতি নিভালে ঘুমাতে পারতাম না। ফলে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুমাতাম ও জেগে থাকতো। আমি ঘুমিয়ে গেলে ও(রানা) রুম অন্ধকার করে ঘুমাতো।’
রানার এই অকাল মৃত্যু বড় ক্ষতি হিসেবে দেখেন মাশরাফি, ‘আমাদের জন্য বড় ক্ষতি ছিল। সাকিব আসার পর রানা ও সাকিব মিলে আমরা আরও ম্যাচ জিততাম।’