স্টাফ রিপোর্টার
ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে কিছু শর্তসাপেক্ষে দোকানপাট, বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামী ১০ মে থেকে খুলবে সবকিছু। সিলেটে করোনায় আক্রান্তের হার যখন প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে, ঠিক এরকম সময়ে শঙ্কা মাথায় নিয়েই বিপণিবিতান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন সরকারি বিধিনিষেধের যাতে প্রয়োগ হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, সরকার গতকাল সোমবার দেশে ১০ মে থেকে দোকানপাট, হাটবাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে সব। সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে ‘সীমিত পরিসরে’ খুলে দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত জানার পর থেকে সিলেটের ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নকশার পোশাক অর্ডার করাও শুরু করেছে। তবে করোনাকালে সুরক্ষার বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বিপণিবিতানই ১০ মে খোলা হবে। সরকার নির্ধারিত সময়েই খোলা থাকবে সব। সরকারি নির্দেশনা মেনে বিপণিবিতানগুলোর সামনে রাখা হবে হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পানি। দলবেঁধে যাতে মানুষ বিপণিবিতানে ঢুকতে না পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। কোনো বিপণিবিতানে মুখে মাস্ক পরা না থাকলে ঢুকতে না দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিপণিবিতানগুলোতে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
তবে এসব পদক্ষেপও সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের শঙ্কা দূর করতে পারছে না। তারা মনে করছেন, ঈদবাজারে মানুষের স্রোত নামলে কোনো কিছুতেই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তখন করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। কেননা, কে করোনাভাইরাস বহন করছেন, তা টেরই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীরা আক্রান্ত হতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর জিন্দাবাজারের ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটির দুই ব্যবসায়ী বলেন, ‘পেট চালাতে হলে প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। কিন্তু ভয় আর আতঙ্ক আসলে যাচ্ছেই না। কার মাধ্যমে কে আক্রান্ত হই, তার কোনো ঠিকঠিকানা নাই। সরকার এ সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলেই পারতো। যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন, তাদেরকে বরঞ্চ প্রণোদনার আওতায় আনা হলেই ভালো হতো।’
জানতে চাইলে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও আল হামরা শপিং সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ‘১০ মে থেকেই আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান খুলবো। আজকে (মঙ্গলবার) আমরা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারি নির্দেশনা মেনে বিপণিবিতানের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। সবাইকে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে। একসাথে সর্বোচ্চ ৩ জন বিপণিবিতানে ঢুকতে পারবেন, দলবেঁধে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিপণিবিতানে নিরাপত্তাকর্মী ২ জন বাড়িয়ে ৪ জন করা হবে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান রিপন আরো বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার (৭ মে) সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের বৈঠক আছে। সেখানে সিটি মেয়র, চেম্বারের সভাপতি, বিভিন্ন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন। সেখানে আরো আলোচনা করে সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
সিলেটের জিন্দাবাজারের সিটি সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মল্লিক মুন্না বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মেনেই আমরা মার্কেট খুলবো। আগামীকাল এ নিয়ে আমাদের সভা আছে। আমরা ইতিমধ্যে মার্কেটের সামনে ও দোকানে দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মার্কেটের বিক্রেতারা মাস্ক পরে থাকবেন। ক্রেতাদের কেউ মাস্ক পরা না থাকলে মার্কেটে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অযথা কেউ যাতে মার্কেটে ঘোরাঘুরি না করেন, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক চেম্বারের খোঁজ করছি। করিমউল্লাহ মার্কেট, ব্লুওয়াটার শপিং সিটিসহ অনেক মার্কেট মালিকই এটা আনা যায় কিনা, সেটা দেখছেন। এটা পাওয়া গেলে মার্কেটের সামনে রাখা হবে। এই চেম্বারের মধ্য দিয়ে তখন মার্কেটে প্রবেশ করতে হবে।’
এদিকে, বিপণিবিতান, দোকানপাট সব খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মোহাম্মদ শোয়েব। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনার চিঠি পেয়েছি। ৯ মে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে বসবো। তবে ব্যক্তিগতভাবে সব খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আমরা শঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, লকডাউন পুরোপুরি ওঠে গেলে দোকানপাট, বিপণিবিতান খুলে দেওয়া ঠিক ছিল। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে অন্য উপজেলা থেকে মানুষ আসবে না, অন্য জায়গা থেকে কেউ আসতে পারবে না। তাহলে বেচাবিক্রি হবে কিভাবে। এর সাথে নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই।
চেম্বার সভাপতি আরো বলেন, ‘মানুষ এখনও সচেতন নয়। কে আক্রান্ত আমরা তা জানি না। সুতরাং এই যে সব খুলে দেওয়ার বিষয়টি সহজ হবে না। মার্কেটগুলো কিভাবে কি করবে, জানি না। আমার মনে হয়, সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এখন স্থানীয়ভাবে প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সমিতি মিলে একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা দরকার।’
চেম্বারের পক্ষ থেকে সব বিপণিবিতান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে বলা হচ্ছে বলেও জানান আবু তাহের মোহাম্মদ শোয়েব। এছাড়া দোকানপাট খোলার বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার জেলাভিত্তিক সভা আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।