করোনায় ঝুঁকি নিতে চান না সিলেটের ব্যবসায়ীরা

95

সবুজ সিলেট ডেস্ক

দিন দিন সিলেটে বাড়ছে করোনা রোগী। ইতোমধ্যে বিভাগের প্রায় সবকটি উপজেলায় হানা দিয়েছে করোনাএ গত ৫ এপ্রিল সিলেটে মাত্র একজন করোনা রোগী ছিলেন। আজ ৫ মে, এক মাসের ব্যবধানে সিলেটে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। তাদের মধ্যে ৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। যার মধ্যে ১১ জন চিকিৎসক, সেবিকা (নার্স) ৮ জন ও হাসপাতালের স্টাফ রয়েছেন ২২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটে ক্রমাগত হারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মুহুর্তে করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে হলে লকডাউন মানার কোন বিকল্প নেই। প্রয়োজনে গৃহবন্ধি থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন- ভীড় এড়িয়ে চলা, মুখে মাস্ক, হাতে গ্ল্যাভস ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে।

ঠিক ওই মুহুর্তে শপিংমল, দোকানপাট ও মার্কেটগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষনা করেছে সরকার। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১১ মে রোববার থেকে দোকানপাট, শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সিলেটের ব্যবসায়ীরা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত দোকান খুলতে রাজি নয়। করোনা সংক্রমন ঝুঁকি নিতে চান না সিলেটের ব্যবসায়ীরা।

এ নিয়ে আজ নগরীর কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক।

নগরীর হক সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মুমিনুল মুহিব বলেন, সিলেটে দিনের পর দিন করোনা সংক্রমন বাড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন ডাক্তার, পুলিশ সহ ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধারা। এই মুহুর্তে দোকান পাট খুলে দেওয়া হলে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমি মনে করি- করোনা সংক্রমন রোধ না হওয়া পর্যন্ত দোকান পাট বন্ধ রাখা ভাল।

ট্রাভেল ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান মোহন বলেন, কোভিড-১৯ এর কোন প্রতিষেধক টিকা এখনো আবিস্কার হয়নি। এ ভাইরাসের একমাত্র চিকিৎসা হলো ভীড় এড়িয়ে চলা, যথাসম্ভব ঘরবন্ধি থাকা। কিন্তু এসব না করে যদি দোকানপাট খুলে দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে করোনা রোগীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ দোকানপাট খোলার বিপক্ষে কথা বলছেন। অনেকেই করোনা সংক্রমন রোধ না হওয়া পর্যন্ত সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জানা যায়- সিলেটে কাপড়ের দোকানের প্রায় সকল কাপড়ই আসে নারায়নগঞ্জ, ঢাকা ও নরসিংদী থেকে। ঈদ উপলক্ষে দোকান পাট খুলে দেওয়া হলে করোনার ডেঞ্জারজোন খ্যাত ওইসব এলাকা থেকে কাপড় চোপড় আসবে। এ কারনে সিলেটেও করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন- কাপড়ে করোনা ভাইরাস ৭ দিনের চেয়ে বেশী দিন বাঁচে। ফলে করোনা ঝুঁকিতে পড়বে সিলেট।

তবে- নগরীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, নগরীর প্রায় ৭০% ক্রেতা বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসেন। ঈদ উপলক্ষে তারা শপিং করতে নগরীতে প্রবেশ করেন। কিন্তু যানবাহন না চললে ক্রেতারা আসবেন কি করে। তাছাড়া বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো কষ্টসাধ্য হওয়ায় প্রবাসী নির্ভর ক্রেতারা তেমন একটা শপিং করতে আসবেন না। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই এবার ঈদে ক্রেতা কমে যাবে। এর চেয়ে ভাল হবে- করোনা সংক্রমন রোধে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, শপিংমল না খুলে অন্তত ৩১ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

সিলেট মডেল লাইব্রেরীর স্বত্তাধিকারী রোটা. মিজানুর রহমান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সকল স্টাফকে করোনা সংক্রমন রোধে সকল প্রকার নিয়ম নীতি মানার জন্য বলে দিয়েছি। সকলে মিলে মিশে করোনা যুদ্ধে জয় করতে হবে।

দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্টির সভাপতি এটিএম শোয়েব বলেন, সরকার অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার তো কাউকে জোর করছে না। এখন ব্যবসায়ীদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখতে হবে। লকডাউন এবং করোনা পরিস্থির এই সময়ে দোকান-পাট খুলে তারা কতটা লাভবান হবেন।

সিলেট মহানগর ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদী পাভেল বলেন, সরকার নির্দেশনা দিয়েছে, কাউকে তো জোর করছে না। দেশকে একা বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই সবাই মিলে মিশে করোনা সংক্রমন থেকে দেশকে বাঁচাতে ৩১ মে পর্যন্ত দোকান পাট বন্ধ রাখা শ্রেয়। আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমন রোধ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, অর্থের চেয়ে আমার কাছে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।

এছাড়াও একাধিক ব্যবসায়ীর কাছে কথা বললে তারা সবাই একই বক্তব্য দিয়েছেন। সবার একটাই কথা- আগে দেশকে, দেশের মানুষকে করোনা থেকে বাঁচতে হবে। আগে জীবন, পরে জীবিকা। জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কি হবে? তাই ব্যবসায়ীরা ৩১ মে পর্যন্ত দোকান পাট বন্ধ রাখার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।