সৌ‌দি‌তে প্রবে‌শের চেষ্টা, ১৭ জেএমবি সদস্য কারাগা‌রে

28

সবুজ সিলেট ডেস্ক

তাবলিগ জামাতের নামে সৌদি আরব গিয়ে ক‌থিত ইমাম মাহদির সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় একমাস আগে ‘হিজরত’ করা গ্রেফতার জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১৭ সদস্যৌকে কারাগা‌রে পাঠা‌নোর আদেশ দি‌য়ে‌ছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৫ মে) ঢাকার মে‌ট্রোপ‌লিটন ম্যাউ‌জি‌স্ট্রেট সারাফুজ্জাসান আনসারী এ আদেশ দেন।

সোমবার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থে‌কে তা‌দের আটক ক‌রে।

এরপর তা‌দের বিরু‌দ্ধে রমনা থানায় সন্ত্রাসবি‌রোধী আইনেস দা‌য়ের করা মামলায় মঙ্গলবার তা‌দের আদালতে হা‌জির ক‌রে কারাগা‌রে রাখার আবেদন ক‌রেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনা‌নি শে‌ষে বিচারক তা‌দের কারাগা‌রে পাঠান।

কারাগা‌রে যাওয়া ১৭ জেএম‌বি সদস্যা হলেন- হায়দার আলী (৪৪), মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, জামিরুল ইসলাম (২৪), বিল্লাল হোসেন (৩৮), শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), সাইফুল ইসলাম (২৫), মোজাম্মেল হক (৩৩), শাহজালাল (৩৪), আক্তারুজ্জামান (৩০), মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), সোহাইল সরদার (৩৩), ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল (২৮) ও সোহাগ হাসান (২০)।

জঙ্গিদের ধরতে অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) তহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, ৪ মে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় কাকরাইল মসজিদের বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।

এডিসি তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জনৈক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং এখনও সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অডিও-ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। গ্রেফতাররা তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে যুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন।

গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তারা পরস্পর যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাবলিগ জামাতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে এক ধরনের গজব নেমে আসবে এবং সমস্ত কিছু ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তখন সীমান্তে কোনো পাহারা থাকবে না-এই সময় তারা যেন চলে আসেন।

এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন ভারতে যাওয়ার জন্য। তাদের আরও জানানো হয়, আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফেররা সবাই মারা যাবে, ইমানদারদের শুধু হালকা কাঁশি হবে। ইমাম মাহদির আগমন এই রমজানে সমাগত। তাই তারা যেকোনোভাবে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন।

তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে মোতাবেক তারা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন।

এডিসি তোহিদ আরও বলেন, ‘সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচলায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশে সৌদি গমন করে আর ফিরে আসেননি। এছাড়া বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও সাতজন ইমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব হিজরত করেছেন বলে গ্রেফতাররা জানান।