প্রথম সংক্রমণের পর বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়েছে করোনা: গবেষণা প্রতিবেদন

6

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য দায়ী করোনাভাইরাসের প্রজাতিটি নিয়ে নতুন একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন জেনেটিকস ইন্সটিটিউটের গবেষকরা। বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৬০০’রও বেশি রোগীর নমুনা নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের শেষ থেকেই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে ঢুকেছে, তার আগে নয়। আর প্রথম সংক্রমণের পর পরই তা বিশ্বে খুব দ্রুত ছড়িয়েছে। তবে দ্রুত ছড়ানোর প্রমাণ মিললেও ভাইরাসটি সহজে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে কিংবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গুরুতর রোগ তৈরি করছে এমন কোনও আলামত মেলেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন জেনেটিকস ইন্সটিটিউটের জেনেটিকস গবেষক ফ্রান্সোয়া বালোক্স ও তার সহকর্মীরা একটি বৈশ্বিক ডাটাবেজ থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণের ঘটনাপ্রবাহ সংগ্রহ করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলো পরীক্ষা করেছেন তারা। এতে দেখা গেছে, গত বছরের শেষের দিকেই ভাইরাসটি মানুষকে আক্রান্ত করতে শুরু করেছিল।

সার্স কভ-২ বা নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই মানুষের শরীরে ঘোরাফেরা করছিলো এবং ওই সময়ের মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠীকে আক্রান্ত করেছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে নতুন গবেষণা। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি এক দিক থেকে খারাপ সংবাদই। কারণ চিকিৎসকদের কেউ কেউ আশা করছিলেন নতুন করোনা ভাইরাস অনেক মাস আগে থেকেই মানুষের শরীরে ছিল এবং ধীরে ধীরে সংক্রমিত করেছে। এর ভিত্তিতে আশা করা হচ্ছিলো যে ওই সময়ের মধ্যে হয়তো কিছুসংখ্যক মানুষের মধ্যে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে।

বালোক্স বলেন, ‘সবাই এমনটা আশা করেছিল, আমিও তাই।’

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি বাদুড়ের শরীরে। এরপর তা অন্য কোনও প্রাণির শরীরে সংক্রমিত হওয়ার পর তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। প্রথম মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয় গত ডিসেম্বরে, চীনের উহানে।

ভাইরাসগুলো নিজেদের জিন পরিবর্তন করার সময় প্রতিবার ভুল করে থাকে। আর এ পরিবর্তনগুলোকেই মলিকুলার ক্লক নামে ডাকা হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে সময় ও ভূগোল অনুযায়ী ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। এর ভিত্তিতে গবেষণা করে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, গত বছরের শেষ নাগাদই মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে করোনাভাইরাস, তার আগে নয়।

বালোক্স বলেন, ‘খুব সম্প্রতিই এটা হয়েছে। আমরা সত্যিকার অর্থে খুব খুব আত্মবিশ্বাসী যে গত বছরের শেষ নাগাদই তা উৎসের শরীর থেকে মানুষের শরীরে এসেছে।’

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কিছু জায়গায় ভাইরাসটি যখন থেকে মানুষকে আক্রান্ত করেছে বলে মনে করা হয়, তারও কয়েক কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রথম আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। বালোক্স মনে করেন, যেকোন্ও দেশেরই প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীকে খুঁজে বের করা অসম্ভব।

বালোক্স আরও বলেন, ‘সব ভাইরাসই প্রকৃতিগতভাবে পরিবর্তনশীল। তাদের এ পরিবর্তন খারাপ জিনিস নয়। ধারণার তুলনায় সার্স কভ-২ ধীরে নাকি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারি না সার্স কভ-২ বেশি প্রাণঘাতী ও ছোঁয়াছে হচ্ছে নাকি সে প্রবণতা কমছে।’