করোনায় সীমাহীন দুর্ভোগে নারী উদ্যেক্তারা

60
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

সুবর্ণা হামিদ
চলমান করোনা দুর্যোগে চরম বিপাকে পড়েছেন সিলেটের নারী উদ্যোক্তারা। নিশ্চিত ক্ষতির কবলে পড়ে অনেকটা দিশেহারা এখন তারা। এই ক্ষতি কিভাবে পোষাবেন এবং ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া নিয়ে ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এই অবস্থায় কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না অনেকেই। একাধিক নারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায় লাভবান হওয়া তো দূরে থাক, এখন টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা। যেখানে নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কায় দিনরাত পার করতে হয় সেখানে ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে অনেকে মানসিক ভাবেও ভেঙ্গে পড়ছেন।
ঈদকে কেন্দ্র করে পুঁজি খাটানোর পাশাপাশি মুল ব্যবসাটা করে থাকেন সব ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছর পুঁজি খাটালেও ব্যবসা করতে না পারায় এখন জমানো টাকা ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে তাদের। সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে দৈনন্দিন খরচ মেটানোর ফলে ভেবে পাচ্ছেন না আসলে তারা কি করবেন। ফলে অনেকটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছেন সিলেটের নারী উদ্যোক্তারা।
সিলেট নগরের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম, একটি ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী। তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভাবে ১০ থেকে ১৫ জন লোকের কর্মসংস্থান ছিল। ব্যবসা বড় করার জন্য নিজের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কিছু টাকা এনেও যুক্ত করেন মূলধনে। রয়েছে ব্যাংক ঋণ ও । এখন এই অবস্থায় তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একতো ব্যাংক ঋণের বোঝা অপর দিকে হাওলাতের টাকা পরিশোধ। সব মিলিয়ে একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিন যাচ্ছে এই সব ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তার। এ রকমই বাকি উদ্যোক্তারা কোনো না কোনো ভাবে সংকটে রয়েছেন এই মুহূর্তে। তারা ভেবে পাচ্ছেন না কিভাবে মোকাবেলা করবেন এই পরিস্থিতি। ফলে জীবন বিপন্নের চিন্তার পাশাপাশি ব্যবসা বিপন্নের চিন্তাও করতে হচ্ছে সিলেটের অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তাকে।
এছাড়া অন্যান্য কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ ও ঈদকে কেন্দ্র করে এটা বড় প্রস্তুতি থাকে তাদের। এবার ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু প্রস্তুতি ঠিক থাকলেও ব্যবসা করতে পারেননি তারা। ফলে এখানে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। যা অনেকটা মরার উপর খাড়ার গা হিসেবে পড়েছে।
কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা প্রত্যেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, ব্যবসা আর চালিয়ে নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে দেনাগ্রস্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে। এসব দেনা পরিশোধ করে ব্যবসায় টিকে থাকা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।
উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি স্বর্ণা রায়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলায় নারী উদ্যোক্তা আছেন পাঁচ শতাধিক এবং তাঁদের অধীনে কাজ করেন ১২ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। তিনি আরো বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য তাঁরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। প্রণোদনা প্রদান ও ব্যাংক ঋণের ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রস্তুত হলে তাঁদের আর্থিক সহায়তা করার চেষ্টা করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।এ ব্যাপারে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্সের বিভাগীয় প্রতিনিধি নুরুন নাহার বেবী জানান, এই পরিস্থিতিতে আমরা যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছি তাদের অবস্থা খুবই খারাপ, কারণ এই রকম কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা আমরা কখনোই করিনি। আর এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে তা-ও বলা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আমাদের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। এই জন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
করোনার তান্ডবে সারা পৃথিবী ধমকে গেছে, ধমকে গেছে মানুষের জীবন মান, এই অবস্থা একদিন স্বাভাবিক হবে, স্বাভাবিক হবে আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জীবনমান, এই প্রত্যাশাই সিলেটের নারী উদ্যোক্তাদের।