যে কারণে ভার্চুয়াল আদালত চান না দেশের সিংহভাগ প্রবীণ আইনজীবী

17

সবুজ সিলেট ডেস্ক

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় দীর্ঘ চিন্তার পর বাংলাদেশের আদালতগুলোতেও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালত চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৬ মে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। শনিবার (৯ মে) রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রণালয় এ গেজেট প্রকাশ করে। এরইমধ্যে গত দুইদিন এই পদ্ধতিতে দেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে এই আদালত পরিচালনার পর আইনজীবীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তরুণ আইনজীবীদের বেশিরভাগই এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানালেও প্রবীণ আইনজীবীরা এ প্রক্রিয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন। বয়সজনিত কারণে প্রযুক্তিগত বিদ্যায় জ্ঞানের অভাব, জানা থাকলেও অনভ্যস্ততা, তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ইত্যাদি কারণে মূলত প্রবীণ আইনজীবীরাই এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। অভিযোগেরও অন্ত নেই তাদের। তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞানের স্বল্পতা তাদের এতটাই কম যে গোপালগঞ্জের জেলা আইনজীবী সমিতির সভায় ভার্চুয়াল আদালতে যে ধরনের সুরক্ষা পোশাক পরতে হবে সেগুলো তাদের নেই এমন মন্তব্যও করা হয়েছে।

এ কারণে গত দুদিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘ভার্চুয়াল আদালত’ প্রত্যাখ্যান করে, কোথাওবা বিক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নবীনদের চেয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে কম অভ্যস্ত প্রবীণ আইনজীবীরাই এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশি। তারা এজন্য কেউ ১৫ দিন, কেউ এক মাস সময় চেয়েছেন। তবে প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে এই ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত হতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ ছেড়ে জীবিকার তাগিদেই বৃদ্ধ বয়সে নিজে বা সহকারীকে দিয়ে অনলাইন কাঠামোটা শেখার চেষ্টা করছেন এখন অনেকেই।

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকা

খুলনায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় বিড়ম্বনা

খুলনা প্রতিনিধি মো. হেদায়েৎ হোসেন জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকে খুলনায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হলেও বুধবার (১৩ মে) থেকে আদালতগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানিতে আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের পক্ষে অংশগ্রহণ করছেন। তবে তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক আইনজীবী বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য অ্যাডভাকট এম এম মুজিবর রহমান বলেন, তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ আইনজীবী চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তবে, বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বয়স্ক আইনজীবীরা।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, ভার্চুয়াল আদালতের নিয়মটি খুব সহজ। কিন্তু আমরা এতে খুব একটা অভ্যস্ত না বলে কেউ কেউ একটু অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। তবে তিনি আশাবাদী, দু-একদিনের মধ্যে তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু আদালত এবং সিভিল কোর্ট বাদে অন্যান্য আদালত চলছে। অচিরেই ওই দুটি কোর্টও চালু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আমাদের আইনজীবীদের জন্য ২০টি কম্পিউটার রয়েছে। যারা তথ্য প্রযুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছেন, তারা এর সহায়তা নিতে পারবেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হওয়ায় মানুষ আইনের সহায়তা নিতে পারছেন।

যশোর জেলা আেইনজীবী সমিতি ভবন

তথ্যপ্রযুক্তি আদালতে বয়স্ক আইনজীবীরা ধরাশায়ী

যশোর প্রতিনিধি তৌহিদ জামান জানান, এ আদালতে শুনানি করার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন যশোরের আইনজীবীরা। জেলার আইনজীবীদের দুই-তৃতীয়াংশই বয়স্ক হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি আদালতে রীতিমত ধরাশায়ী হয়ে গেছেন তারা। তাদের অনেকেই ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। তাদের অভিযোগ, পূর্ব প্রস্তুতি, লজিস্টিক সাপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় ডিজিটাল এই পদ্ধতিতে বিচারকার্যে অংশ নিতে পারছেন না তারা।

প্রবীণ আইনজীবী শামসুল হক বলেন, যশোরে চার শতাধিক আইনজীবী নিয়মিত প্রাকটিস করেন। যার দুই তৃতীয়াংশই আমার মতো সিনিয়র। আমরা বাটনওয়ালা মোবাইল ফোন ঠিকমতো চালাতে পারি না। আর স্মার্টফোন, ওয়েবক্যাম ,স্ক্যানার- এগুলো কীভাবে চালাবো। প্রশিক্ষণ পেলে অন্তত জুনিয়রদের দিয়েও কাজটা চালাতে পারতাম।

তিনি অবশ্য বলেন, ‘এটি সরকারের খুব ভালো ডিসিশন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব না। আমাদের সময় দিতে হবে।’

তরুণ আইনজীবী মোস্তফা হুমায়ুন কবীর বলেন, এই আইনটি স্মার্ট ও যুগোপযোগী। আইন বাস্তবায়নের জন্যে বিচারক, বেঞ্চ সহকারী, আইনজীবী, পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ প্রত্যেককেই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা জরুরি ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে পারে। কিন্তু একজন আইনজীবী হিসেবে আমার নিজেকেই এগুলো করতে হবে। আর এই মুহূর্তে যদি আইন অনুযায়ী কাজ করতে হয়, তাহলে আমাকে সাইবার ক্যাফেতে যেতে হবে। আর সাইবার ক্যাফেতে গেলে আমি, আমার মক্কেল এবং বিচার ব্যবস্থার গোপনীয়তা বিনষ্টের শঙ্কা রয়েছে। আইনেই বলা হয়েছে, নারী ও শিশুর শুনানি প্রকাশ্য আদালতে হবে না। বিচারকের খাস কামরায় হতে হবে। সেখানে এই রকম মামলা আমি কীভাবে সাইবার ক্যাফেতে করবো।

তিনি বলেন, অনেক মামলার জামিন বা শুনানির সময় আসামির জবানবন্দির তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। একটা পাবলিক প্লেসে সেগুলো টানতে হলে মামলার তদন্ত কার্যক্রমের গোপনীয়তাও নষ্ট হয়। সর্বোপরি কোনও সফট কপি সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারে থেকে গেলে, সেটি বিচারিক কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সে কারণে এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে হবে।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, এই আইনটি কাযর্কর করতে প্রশিক্ষণ ও পূর্ব প্রস্তুতি জরুরি। আইন পাস হয়েছে ৯ মে; আর কার্যকর করা হচ্ছে ১১ মে থেকে। এটি কোনও ম্যানুয়াল কোর্ট নয়, প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ কোর্ট। ফলে কীভাবে আমরা এই ভার্চুয়াল কোর্টে অংশ নেবো- তার কোনও প্রস্তুতিই নেই। প্রথমত আমার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলফোন সেট বা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থাকতে হবে। আবার ইন্টারনেট সংযোগ, মেইল আইডি, মামলার ডকুমেন্টগুলোর সফট কপি করতে স্ক্যানারও লাগবে। কোন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা এই কোর্টে অংশ নেবো- সরকার সে সম্পর্কে কিছুই আমাদের জানায়নি। মিনিমাম প্রস্তুতির জন্যে কোনও গাইডলাইন দেওয়া হয়নি। ফলে, আইন বা অধ্যাদেশ পাস করার পর একদিনের মধ্যে এই আইন কার্যকর করা অসম্ভব। এক মাস বা কমপক্ষে ১৫দিনের সময়, সঙ্গে গাইডলাইন যদি দেওয়া থাকতো- তাহলে এটি সম্ভব হতো। পৃথিবীর কোনও দেশে এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর একটি আইন একদিনের মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সেক্রেটারি এমএ গফুর বলেন, করোনা দুর্যোগের সময় মামলার জট কমাতে সরকার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাস্তবায়নের জন্যে দেশের বেশিরভাগ আইনজীবী প্রস্তুত নন। আমাদের প্রশিক্ষণ ও সময় দিতে হবে। আইনমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি জানিয়েছি । যতদিন না এই অগ্রযাত্রায় সামঞ্জস্য হতে না পারি, ততদিন পর্যন্ত প্রথাগত শুনানির দাবি জানিয়েছি।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বগুড়া

ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়ে জেলায় জেলায় আইনজীবীদের বিক্ষোভ

এদিকে, মঙ্গলবারের পর বুধবারও দেশের বিভিন্ন জেলা আদালত প্রাঙ্গণে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অনেক আইনজীবী। গত দুদিনে বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, জামালপুরসহ আরও কিছু জেলায় আইনজীবীদের এমন বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বুধবার দুপুরে অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বগুড়ায় ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম বর্জন করা হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে সীমিত আকারে হলেও আগের পদ্ধতির পাশাপাশি ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু রাখার অনুরোধ করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি অনেক আইনজীবী। তারা বর্জনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, এটা সরকারি দল সমর্থিত সিনিয়র কিছু আইনজীবীর হটকারী সিদ্ধান্ত। এতে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, জেলার আইনজীবীরা তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানের স্বল্পতা এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ভার্চুয়াল আদালত বর্জন করেছেন। পাবনা আইনজীবী সমিতির সভায় ভার্চুয়াল আদালত বর্জন করে আদালতের কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

পাবনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন সবুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, স্ক্যানার মেশিন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকা জরুরি। আইনজীবীদের অনেকেরই এই মুহূর্তে এসব সরঞ্জাম কেনার মতো সঙ্গতি নেই।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের আইনজীবীরা ভার্চুয়াল আদালতে অংশ নেবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্য কোন বিকল্প উপায়ে আদালত চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (১২ মে) দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বর্ধিত সভা আহ্বান করেছেন আইনজীবীরা। তাদের বক্তব্য, বেশির ভাগ আইনজীবী তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রস্তুত নন। ভার্চুয়াল আদালতে মামলার নথিপত্র স্ক্যান করে তা আদালত এবং অপরপক্ষের আইনজীবীকে পাঠাতে হবে। তাই আইনজীবীদের ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে তথ্য প্রযুক্তিগত অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। এজন্য ভার্চুয়াল পদ্ধতি বাদ দিয়ে অন্য কোনও বিকল্প উপায়ে আদালত পরিচালনার দাবি তোলেন অধিকাংশ আইনজীবী।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, রাজশাহী
রাজশাহী প্রতিনিধিও জানান, প্রযুক্তিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারিক কাজে আগ্রহ নেই রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের অধিকাংশ আইনজীবীর। ফলে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা নিয়ে একরকম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী জানান, রাজশাহী বারের ৯০ শতাংশ আইনজীবী প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল কার্যক্রমে অভ্যস্ত নয়। প্রক্রিয়া সম্পর্কেও এখনও ন্যূনতম ধারণা পাননি তারা। তাদের এনিয়ে কোনও প্রশিক্ষণও নেই। ফলে তার হীনমন্যতায় ভুগছেন। ভার্চুয়াল কোর্টে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না।
তিনি আরও বলেন, আমরা মঙ্গলবার (১২ মে) একটি মিটিং করেছি। সেখানে উপস্থিত আইনজীবীরা তাদের মতামত জানিয়েছেন। সেখানে দু’চারজন হয়তো ভার্চুয়াল কোর্টের বিষয়ে উচ্ছ্বসিত। তবে অধিকাংশ আইনজীবী যেহেতু এটা নিয়ে আগ্রহী নয়, তাই চলতি সপ্তাহে ভার্চুয়াল কোর্টে আইনজীবীদের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, ভার্চুয়াল কোর্টে অংশ নিচ্ছেন না জামালপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. এনায়েত হোসেন হিটলার জানান, ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে আইনজীবীরা একমত নন বলে কোর্টে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জরুরি সভায়।

বরিশালে আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে ‘ভার্চুয়াল আদালতের’ বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

বরিশাল প্রতিনিধি জানান,আদালতে ভার্চুয়াল কার্যক্রম চালুর প্রতিবাদে এবং পূর্বের মতো ম্যানুয়াল পদ্ধতি চালুর দাবীতে বরিশালে মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল করেন আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীরা ভার্চুয়াল আদালতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক কাইয়ুম খান কায়ছার বলেন, বরিশালে ইন্টারনেটের গতি খুবই কম। এছাড়া আইনজীবীদের বড় একটি অংশ প্রবীণ হওয়ায় ফেসবুক, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পারদর্শী নন তারা। এ কারণে অনেক আইনজীবী ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম চান না।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জের আইনজীবীরাও ভার্চুয়াল আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি তাদের ভার্চুয়াল আদালত সম্পর্কে জ্ঞানের সীমা এতই কম যে এই আদালতে কী ধরনের পোশাক পরে উপস্থিত হতে হবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিছু আইনজীবী।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুন্সী আতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম. জুলকদর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চুয়াল আদালত বর্জনের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বলা হয়েছে, ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘এই ভার্চুয়াল কোর্ট করতে যেসব সুরক্ষামূলক পোশাক থাকতে হয় তা আইনজীবীদের নেই এবং এ বিষয়ে তাদের কোন প্রশিক্ষণও নাই।’

জেলা জজ আদালত, ফেনী

প্রতিবাদের ভেতরেই বসছে আদালত

প্রবীণ আইনজীবীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং অনেকেরই শিখতে না চাওয়া কিংবা উপকরণের সংকটের অজুহাত সত্ত্বেও দেশের বেশিরভাগ জেলাতেই আস্তে ধীরে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল আদালত। বয়সে তরুণ এবং তথ্য প্রযুক্তিতে আগ্রহী বেশিরভাগ আইনজীবী এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই দাবি, বিভিন্ন জেলা বার থেকে ভার্চুয়াল আদালত বর্জনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের নামে যা বলা হচ্ছে তা আসলে সঠিক নয়। বেশিরভাগ বারেই এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিমত আছে এবং আইনজীবীদের তরুণ অংশটি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে জুনিয়র আইনজীবী হওয়ায় প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না অনেকেই।

এদিকে ভার্চুয়াল আদালতের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন আদালতে মাধ্যমে সারাদেশে ১০৪ জনের জামিন হলেও বুধবার ১ হাজার ১৮৩ টি আবেদনের শুনানি নিয়ে ১ হাজার ১৩ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (ফাইল ছবি)

আইনটি যুগান্তকারী: আইনমন্ত্রী

তবে আইনটিকে যুগান্তকারী এবং এ আইন বাংলাদেশকে আর একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, দেশে যেহেতু ভার্চুয়াল কোর্ট আগে ছিল না। তাই এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তবে এ সম্পর্কিত অধ্যাদেশ প্রণয়নের চিন্তাভাবনার শুরু থেকে বিচারকদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়েছিল। এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান থেকে তারা স্বল্প পরিসরে জামিন শুনানীসহ অন্যান্য কাজ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গত ৯ মে ‘আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ নামে ভার্চুয়াল আদালতের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ঐতিহাসিক এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের বিচারাঙ্গনও চলে আসে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অনলাইনের ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। তবে ভার্চুয়াল কোর্ট বসাতে এখনো হাইকোর্টের রুলস সংশোধনীর প্রয়োজন রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। যদিও এই আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে আইনজীবীরা যে প্রশ্ন তুলেছেন তার এখনও মীমাংসা হয়নি।