বিএসএমএমইউতে সীমাহীন নিয়োগ দুর্নীতি: স্ত্রীর আত্মীয়সহ ২ হাজার জনকে চাকরি দিয়েছেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন

1

অনলাইন ডেস্ক: ২০২১ সালের ২৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একাদশ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। উপাচার্য হিসেবে বুধবারই শেষ কর্মদিবস ছিল তার। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিকে সফলতা দেখালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলোচিত-সমালোচিত হতে থাকেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে সীমাহীন নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি দুই হাজারের বেশি নিয়োগ দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের দাবি।

উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর অধ্যাপক শারফুদ্দিনের ছেলে তানভীর আহমেদ ও ছেলের বউ ফারহানা খানম চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার স্ত্রী নাফিজা আহমেদের ভাইয়ের ছেলে সাব্বির হোসেনকেও কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

এই তিন নিয়োগেই থেমে থাকেননি উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ। পরিবারের আরো ৭ সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সম্প্রতি উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) শিক্ষকরা। বিক্ষোভে চিকিৎসক নেতারা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সরা উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, গত ৩ বছরে স্থায়ী, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিকসহ বিভিন্ন উপায়ে ২ হাজারের বেশি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, মেডিকেল অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া, গাড়িচালক, সুইপার ও এমএলএসএস নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগের বড় অংশকে তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন এবং পর্যায়ক্রয়ে স্থায়ী করে নেন। নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের কথা থাকলেও বেশিরভাগ নিয়োগই হয়েছে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়া।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার পরও দায়িত্বের শেষ সময়ে যেকোনো উপায়ে একটা সিন্ডিকেট সভা করতে চেয়েছিলেন বিদায়ী উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ। যে সিন্ডিকেটে তিনি ২৫০ জনের নতুন নিয়োগ ও পুরোনোদের পদোন্নতি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের বাধায় সেই সভা করতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া যখন বিদায় নেন তখন ৪০০ জনের কিছু বেশি ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী রেখে গিয়েছিলেন, যাদের একটা বড় অংশ অস্থায়ী ছিল। কিন্তু উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন অস্থায়ীদের স্থায়ী করতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন এসব নিয়োগে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। অথচ উপাচার্য পদ থেকে বিদায় নেয়ার সময় অধ্যাপক শারফুদ্দিন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা রেখে যাচ্ছেন ১ হাজারের কাছাকাছি। এই নিয়োগের পেছনেও বড় অনিয়ম করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। তিনি ব্যক্তিগত সহকারী ডা. মোহাম্মদ রাসেলকে অধিক ক্ষমতাবান করে তোলেন। রাসেল বিভিন্ন নিয়োগ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন, যার বড় অংশীদার ছিলেন উপাচার্য। উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতির আরেক বড় সহযোগী ছিলেন বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. রসুল আমিন শিপন। এই দুইজন তাদের অনেক পারিবারিক আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বড় বড় সব নিয়োগ দিয়েছেন।

এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মসিউজ্জামান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক লোকমান তাদের পরিবারের একাধিক সদস্যকে চাকরি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বেশিরভাগ নিয়োগেই এ ৪ জনের হাত রয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার সময়ে অনেক ভালো ভালো কাজ হওয়া সত্ত্বেও একটি পক্ষ সবসময় বিরোধিতা করে আসছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায়ী সব ভিসিকেই পালাতে হয়েছে। আমি সঠিক ছিলাম বলেই শেষ দিনও অফিস করছি। একসময় সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। ৬ মাস পরই আপনারা বুঝতে পারবেন আমি কেমন ছিলাম।