শাবিপ্রবি প্রতিনিধি, সিলেট: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০৬টি দলকে পিছনে ফেলে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় কোডিং প্রতিযোগিতায় (কোড সামুরাই-২০২৪) এ চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি)’র দল ‘ডিফাইন কোডারস’। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী নাফি উল্লাহ শাফিন, ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মেহরাজুল ইসলাম ও শাওন মাজিদ।
দু’দিনব্যাপী চলমান প্রতিযোগিতায় গত শনিবার(১১ মে) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর সমাপ্তি হয়।
বাংলাদেশ-জাপান জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিসহ বেশকয়েকটি জাপানি আইটি কোম্পানির সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের আয়োজনে দুদিনব্যাপী এই আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় হ্যাকাথন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০৭টি দল অংশগ্রহণ করলেও তারমধ্যে ২৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪৬টি দল ফাইনালে পৌঁছায়। যার মধ্যে শাবিপ্রবি থেকে ছিল ৭টি দল।
চ্যাম্পিয়ন হওয়া ডিফাইন কোডার্স দলের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটয়্যার প্রকৌশল বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহরাজুল ইসলাম আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ অর্জন আমাদের একার নয়, এটি আমাদের শাবিপ্রবির একটা সফলতা। শাবিপ্রবি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরেই সুনাম বয়ে আনছে। ভবিষতে আমরা দেশ-বিদেশে এমন ভাল কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। আমাদের স্বদিচ্ছা আছে যেন আমরা আরও ভাল উপস্থাপন করতে পারি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের দোয়া ও সমর্থন কামনা করি যেন আমাদের পথ চলা আরও সুদূরপ্রসারী হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশন অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) এর পরিচালক এবং সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েকটি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। তাঁরা সবসময়ই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এবার অংশ নেয়া দল গুলোর মধ্যে এই দলটির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় তাঁদের অভিনন্দন। আশা করি প্রতিযোগিতা অংশ নেয়া বাকিরও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো গৌরব অর্জন করে আমাদের সুনাম আরও বৃদ্ধি করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ কবির হোসেন বলেন, ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্রবণতা থাকে যে, তাঁরা সব সময় প্রথম হতে চায়। আর এই ইচ্ছাশক্তি তাঁদের কে প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে সহায়রা করে। ফলে কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও তাঁরা প্রথম হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করছে। আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁদেরকে অভিনন্দন। আমার বিশ্বাস, তাঁরা একদিন বিদেশের বুকে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখে আরো সুনাম বয়ে আনবে।’
তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রায়, নতুন নতুন উদ্ভাবনে এবং অপব্যাবহার রোধে নিজেদের প্রস্তুত করতে তরুণ প্রোগ্রামার ও প্রযুক্তিবিদদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন গৌরবোজ্জ্বল সফলতায় শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়াচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থী গড়তে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন তাঁদের প্রস্তুত করতে আমরা পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি। আমরা গত অর্ধযুগে শতাধীক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এর থেকে প্রমাণির হয়, আমরা দক্ষ গ্রেজুয়েট তৈরি করছি। যারা সবসেক্টরেই মেধার পরিচয় দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের এমন সফলতা শাবিপ্রবির সম্মান ছড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই আমার ইচ্ছা ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উন্নত স্থানে নিয়ে যাওয়া, আমি সেটাই করছি। আমি চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয় এমনভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করতে যেন আগামী ১শ বছরে এতে হাত না দেয়া লাগে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করার দক্ষ গ্রেজুয়েট হয়ে সারাদেশে আমাদের সম্মান বয়ে বেড়াবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করতে পারে সেজন্য আমরা সুযোগ সৃষ্টি করছি। আমরা ইতিমধ্যে ইনোভেশন হাব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এখন আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ভালো করছে। বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে আমরা সারাদেশের দ্বিতীয় হয়েছি এবং আগামীতে প্রথম হবে ইনশাল্লাহ। আমার আহ্বান থাকবে, আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কারো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতা করে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।