মোঃ মাহবুব আলম চৌধুরী জীবনঃ বিগত দুইবছর পূর্বে ২০২২ সালের বন্যার ক্ষতির ক্ষত শুঁকায়নি এখনো। অনেকেই ঘরবাড়ী তৈরী করতে পারেননি। আসবাবপত্রে লেগে থাকা পানির দাগ এখনো মুছেনি। এরই মধ্যে আবারও বন্যার আঘাত। দিশেহারা পানিবন্ধী মানুষ। কুরবানির ঈদের দিন থেকে এবার শুরু হয় বন্যা। বাড়তে থাকে পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টি। সময় গাড়ানোর সাথে বাড়তে থাকে বন্যায় আক্রান্ত মানুষের উদ্ধারের জন্য আকুতি। তখন নৌকা যেন সোনার হরিণ। টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে অসহায় এসব মানুষদের উদ্ধারে নৌকা নিয়ে নিজেই মাঠে কাজ শুরু করেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মজির উদ্দিন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ৩টি নৌকা দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে মানুষদের খোঁজখবর নিচ্ছেন তাদের মাঝে খাবার বিতরণ করছেন। সরকারি ত্রানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমেও বন্যার্ত মানুষদের ত্রাণ বিতরণ করছেন। এ ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে যাতে বড় ধরনের সহায়তা পাওয়া যায় সে জন্য তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে সরেজমিনে বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য নিয়ে আসেন। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্টের সদস্য হওয়ায় তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. মোঃ উবায়দুল কবীর চৌধুরীকে বন্যা পরিস্থিতি পর্যব্যক্ষণ করার জন্য নিয়ে আসেন যাতে আন্তর্জাতিক ভাবেও বন্যার্ত মানুষগুলো সহায়তা পায়।
এ মাসেই উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছেন মজির উদ্দিন। নির্বাচনী আমেজ শেষ হতে না হতেই প্রাকৃতিক বন্যায় নাজেহাল কোম্পানীগঞ্জ। এক মাসের নির্বাচনী ধকলে ক্লান্ত না হয়ে বিপদগ্রস্ত উপজেলার মানুষদের কাছে প্রতিদিন যাচ্ছেন। ঈদের দিন থেকে তিনি নৌকা নিয়ে পানিবন্ধী মানুষদের উদ্ধারে গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি নিজ অর্থায়নে ৩টি নৌকা দিয়ে পানিবন্ধী মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। ২০২২ সালের বন্যায় দিশেহারা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষদের জন্য রেডক্রিসেন্ট এর মধ্যে বেশ কিছু সহায়তা করেছিলেন। সে সময় তিনি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি উপজেলার কয়েকটি গ্রামে টিনের ঘর তৈরি করে দেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মজির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, প্রথমেই বন্যা আক্রান্ত মানুষদের উদ্ধারে নৌকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাই। যখন যেখানে খবর পেয়েছি মানুষ পানিবন্দী হয়ে আটকে আছে তাদেরকে উদ্ধারে সেখানে নৌকা পাঠিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসি। ঈদের দিন থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করি। যেখানে গিয়েছি তাদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছি। পরের দিন থেকে আমরা রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি। প্রথমদিকে শুধুমাত্র আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার বিতরণ করা হয়েছে কারণ এই সময়ে আমাদের জানা ছিল না কোন ঘরে মানুষ আছে বা কোন ঘরে মানুষ নাই। তাই আশ্রয় কেন্দ্রগুতে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গ্রামের পানি বন্দী মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মত শুকনো খাবার চিড়ামুড়ি গুড় দিয়েছি। এ ছাড়াও রেডক্রিসেন্ট এর পক্ষ থেকে শুক্রবার আড়াইশো প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এসময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. মোঃ উবায়দুল কবীর চৌধুরী, আইএফআরসি এর বাংলাদেশ কান্ট্রি ডেলিগেশন মি. আলবার্টো বোকানেগ্রা, ডিজাস্টার রেসপন্স বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক মো: মিজানুর রহমানকে আমি কোম্পানীগঞ্জে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। তাদেরকে নিয়ে একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছি। যাতে করে তারা দেখে যেতে পারেন কোম্পানীগঞ্জের প্রকৃত বন্যার চিত্র। এবং তাদের মাধ্যমে যাতে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি দেখে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা পেতে পারি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আরো বলেন, বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমি চিন্তা করলাম কিভাবে আমাদের কোম্পানীগঞ্জের প্রকৃত বন্যার চিত্র এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সরকারের উপর মহল পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। সে লক্ষ্যে আমি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সিলেট-৪ আসনের এমপি ইমরান আহমেদের মাধ্যমে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে কোম্পানীগঞ্জে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। তিনি এসে বন্যার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেখে গেছেন। আশা করছি আমরা কোম্পানীগঞ্জের বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের জন্য সরকারের বড় একটি সহযোগিতা পাবো। ইতিমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে ৯ টন করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য বিতরণ করা হবে। এগুলো আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মাধ্যমে বিতরণ করছি। এছাড়া আমাদের চিন্তায় রয়েছে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য আমরা প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।