শাবি গেইটে পুলিশ-ছাত্র সংঘর্ষ, প্রায় অর্ধশত আহত

3

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ও এর সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে পুলিশ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছেন। জরুরি সেবার যানবাহন ও অফিস ছাড়া সব বন্ধ রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এ কর্মসূচি পালনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। এসময় তারা পুলিশ-বিজিবির সামনে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়।

শাবি ক‍্যাম্পাসে থাকা সিলেটভিউ’র নিজস্ব প্রতিবেদক নাজাত আহমদ পুরকায়স্থ জানান- সোয়া ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক‍্যাম্পাসের দখল নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ইট-পাটকেল ও পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি-টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়।
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে।

আর পুলিশ বলছে- তাদের অন্তত ৫ জন সদস্য শিক্ষার্থীদের হামলায় আহত হয়েছেন।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এসময় একজনকে আটক করা হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বলেন- শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পুলিশ তাদের প্রতিহত করে। তাদের হামলায় আমাদের ৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের মাথায় আঘাত গুরুতর। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে সে বহিরাগত। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোমান ফয়সল জানান- বেলা ১১টা ২০ থেকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে ও অবস্থানের আশপাশে প্রচুর পুলিশ রয়েছে। তবে দুপুর ১২ পর্যন্ত কোনো অঘটনা ঘটেনি। তীব্র গরমকে উপেক্ষো করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে কোটা, সরকার ও পুলিশবিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) বিশেষ টিম ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)। এসময় থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় তারা।

দুই সপ্তাহ ধরে চলা শিক্ষার্থী আন্দোলন প্রথমে অহিংস থাকলেও রবিবার (১৪ জুলাই) রাত থেকে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠে সিলেট। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ৬ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বুধবার (১৭) জুলাই দিনভর সিলেট ছিল উত্তাল। এছাড়া ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরেও পুলিশের সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

সিলেটের আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বুধবার রাতে বলেন- বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় অবস্থান নিবো। জরুরি সেবা ছাড়া আর সব বন্ধ থাকবে। আশা করছি- সিলেটের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এটা অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সবাই অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।
তিনি জানান- কর্মসূচি বাস্তবায়নে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা শুরুতে মেয়েদের হল গুলো পুরোপুরি নিরাপদ করতে সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে একত্রিত হয়ে মেয়েদের হল ঘুরে এসে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এবং কন্ট্রোলার ভবনে তালা মেরে বেলা ১১টায় ভার্সিটি গেইটে অবস্থান নিবে এবং দিনভর মাঠে থাকবে।

কিন্তু এসব কর্মসূচি শুরু করার আগেই সকাল ৮টা থেকে শাবি ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় পুলিশ।

আসাদুল্লাহ আল গালিব বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা দিকে বলেন- পুলিশের ভয়ে কিছু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী হল ছেড়েছে। তবে বেশিরভাগই হলে রয়ে গেছেন। পুলিশ চাপ দিচ্ছে হল ছাড়তে। কিন্তু যাই ঘটে যাক আমরা হল ছাড়বো না। আর যারা বের হয়েছে তারাও পুরোপুরি চলে যায়নি, আশপাশেই আছে। কর্মসূচি শুরু হলে তারা এসে আমাদের সঙ্গে যোগদান করবে।

এর আগে সারা দেশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মঙ্গলবার রাতে দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া বুধবার দুপুরে- বিকাল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় শাবি প্রশাসন। কিন্তু এসব নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোরনকারী শিক্ষার্থীরা হলে থেকে যায় এবং বুধবার দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া বিকালে বিশ্ববিদ্যালরে শাহপরাণ হলের কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো দা ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।