ছাতকে রাতের আধারে সোনাই নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

3

ছাতক প্রতিনিধি: ছাতকে সীমান্তবর্তী সোনাই নদী থেকে বালু উত্তোলনে আবারো স্বক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। সীমান্ত ঘেষা সোনাই নদীতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বালু খেকোদের আগ্রাসন। মাঝে-মধ্যে প্রশাসনের তৎপরতায় বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো একই কায়দার শুরু হয় বালু উত্তোলন। তবে দিনের চেয়ে রাতেই বালু উত্তোলনে উপযুক্ত সময় হিসেবে বেচে নিয়েছে এ মহলটি। এ নিয়ে স্থানীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, বর্ষায় খরস্রোতা সোনাই নদী শুকনো মৌসুমে নদীর বুক জুড়ে ভেসে উঠে বালুচর। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর নদীর কয়েক কিলোমিটার পরিনত হয় বালু মহালে। আর এ সময়টিতে সোনাই নদীতে চলে বালু উত্তোলনের উৎসব। সোনাই নদী থেকে বালু উত্তোলনে কোন ইজারা বা অনুমতি না থাকায় প্রভাবশালীরা স্থানীয় আধিপত্য ব্যবহার করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে থাকে বিনা বাধায়। ফলে হুমকীর মুখে পড়ে নদীর দু’পার, উভয় পারের কৃষি জমি ও রাবারড্যাম।

বৈশাকান্দি-বাহাদুরপুর মৌজায় কৃষি জমি সেচ প্রকল্পের আওতায় আনতে ২০১২ সালে সোনাই নদীর উপর প্রতিষ্ঠিত হয় রাবারড্যাম। রাবার ড্যামের পরবর্তি সীমান্তের দিকের অংশই মুলত বালু মহাল। বালু মহালের একপার ছাতক এবং অন্য পার কো¥্পানীগঞ্জ উপজেলা। বর্তমানে দেশে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বালুর চাহিদা। ঘনফুট হিসেবে বিক্রি হওয়া বালুর মুল্য দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অবিশ্বাস্যভাবে। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাতা-রাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সীমান্ত অঞ্চলে বসবাস করা কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। আইনের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের চেয়ে রাতের আধারেই বালু উত্তোলনের পথ বেচে নেয় এ চক্র। সন্ধ্যা নামার সাথে-সাথেই ঝাঁক বেধে বারকি নৌকা বালু মহালে হানা দেয়। বারকি নৌকা ভর্তি করে আনা বালু রাবারড্যাম এলাকায় বড় নৌকা আনলোড করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি বারকি থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে ওই প্রভাবশালী চক্র। বিগত সরকারের আমলে সোনাই নদীতে যারা বালু উত্তোলন ও বিক্রির রাজত্ব কায়েম করেছিল এখন তাদের আর দেখা মিলছে না। তবে বালু উত্তোলন থেমে থাকেনি। শুধু হাত বদল হয়েছে।

বালু উত্তোলনে চাঁদা দেয়া নিয়ে সম্প্রতি বারকি শ্রমিক ও চাঁদা আদায়কারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বারকি শ্রমিকরা মনে করেন যেহেতু সোনাই নদী বালু মহাল সরকারীভাবে কোন লিজ প্রদান করা হয়নি, সেহেতু তারা কাউকে চাঁদা না দিয়েই বালু উত্তোলন করতে পারবে। এ নিয় সংঘর্ষে উভয় পক্ষেই ৭-৮ জন করে গুরুতর আহত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সালিশে নিস্পত্তি হলেও বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজী চলছে নিয়মিতভাবেই। ফলে সরকার কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাবারড্যাম। উত্তোলিত এসব বালুর বেশীরভাগই কোম্পানীগঞ্জ এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। সরকারী সম্পদ রক্ষায় আইনী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।