সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
দেশের যেকোনো উপদেষ্টাকে নামাতে শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৪ ঘণ্টাই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক আবু নাসিম।
তিনি বলেন, যে অন্যায় করবে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে কথা বলবে। দেশের যেকোনো উপদেষ্টাকে নামাতে আমাদের ২৪ ঘণ্টাই যথেষ্ট। এই বিপ্লবের দুই মাসও পার হয় নাই। আপনারা আমাদের ঢং মনে করেন। আপনারা আমাদের গনেন না, অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে চান। এই বাংলাদেশকে দেখে নেয়ার জন্য আমাদের ৩৬ দিনই যথেষ্ট। আমি প্রত্যেকটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সুনামগঞ্জ জেলার নেতা-কর্মী এবং সংগ্রামী-বিপ্লবী সাথী-বন্ধুদের বলতে চাই- আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী সুনামগঞ্জের প্রতিটা ইঞ্চি মাটির নিরাপত্তা, আমাদের সরকারের রাজস্ব নিশ্চিত করতে আবার মাঠে নামতে প্রস্তুত আছেন? পারবেন না? সুতরাং আমি আমার অত্যন্ত কাছের বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের কনসার্ন রেখে আপাতত কথা এখানে শেষ করলাম। কথা হবে সবার রাজপথে, আর কোনো ফরমাল মিটিংয়ে বা টেবিলে নয়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ধোপাজান-চলতি নদীতে গেল ৩ মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট হয়েছে। সেই বালু পাথর লুটের সঙ্গে পুলিশ জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপারের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।
তবে পুলিশ সুপার জানান, নদীর বালু লুটের সঙ্গে যে পুলিশ সদস্যরা জড়িত তাদের বিষয়ে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিক।
সভা সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হলেও সেখানে জেলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বক্তব্য রাখেন। তবে দুপুর ২টায় হঠাৎ করে সুনামগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের সময় বাধে বিপত্তি। সেখানে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলার পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজশে নদী লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। পরে সভায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয়। পরে সভায় উপস্থিত থাকা বিভাগীয় কেন্দ্রীয় দুই সমন্বয়ক মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি নতুন এই জেলায় যোগদান করেছি। নদী লুটের সঙ্গে যে পুলিশ সদস্যরা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিক বলেন, সুনামগঞ্জের নদী লুট বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা নদী লুটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইজারা দেয়া বালু মহালগুলোতে বালু আছে কিনা তা আবারও খতিয়ে দেখা হবে। যারা বালু লুট করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ধোপাজান-চলতি নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করে নির্দেশনা জারি করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ধোপাজান-চলতি নদীতে হঠাৎ করেই ড্রেজার লাগিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন শুরু হয়। দফায় দফায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি অভিযান চালিয়ে এ অবৈধ বালু ও পাথর লুট বন্ধ করতে পারেনি। বালু লুট ঠেকাতে শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ সদর থানার উদ্যাগে চলতি নদীর প্রবেশমুখে বড় তিনটি বাল্কহেড দিয়ে জনসাধারণ চলাচলের রাস্তা রেখে প্রবেশমুখে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। এছাড়া দুই দিনে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে নদীর লুটের সঙ্গে জড়িত মূল হোতা বাবুল ও নিজামকে গ্রেফতার করে।