সবুজ সিলেট ডেস্ক
বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা? জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।’
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানী মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে বিএনপির প্রয়াত নেতা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি তোলা হচ্ছে, সেটাকে চক্রান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা একটা চক্রান্ত। দেশে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টির জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে। যেটা কোনো ইস্যু না, সেটাকে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। আমি মনে করি এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সচেতন হওয়া দরকার।
এর আগে স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ও দেশের গণতন্ত্রের জন্য সাবেক রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদ সারাজীবন কাজ করে গেছেন। সাবিহ উদ্দিন দেশ ও জনগনের প্রশ্নের কোনো কম্প্রমাইজ করেননি। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। এমন মানুষ পাওয়া দুস্ককর। একজন দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে তাকে দেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণে রাখবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবিহসহ আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল এই সমাজটাকে পরিবর্তন করব, বদলে দেবো। পরবর্তী সরকারি চাকরিতে চলে যাওয়ায় আর সম্ভব হয়নি। সরকারি চাকরিতে গেলেও লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি, সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন সাবিহ’।
তিনি বলেন, সাবিহ যেখানেই ছিল সেখানেই দেশের জন্য কাজ করেছে, জনগণের জন্য কাজ করেছে। সবচেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে যে, যখন তিনি আমাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন তখন দেখেছি যে, তিনি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেছেন।
শেখ হাসিনার শাসনমালে সাবিহ উদ্দিন ওই সময়ে সরকারের রোষানলে নির্যাতিত হওয়ার তুলে ধরেন বলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওই সময়ে তার ওপরে প্রচণ্ড আক্রমণও হয়েছিল, রিয়াজ রহমান সাহেবের গুলি লেগেছিলো, সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল আর আরেকজনের যেন কে তার ওপরও আক্রমণ হয়েছিল। এই সময়গুলো আমরা পার করেছি। তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টকর। কোনো কিছুতে ভেঙে পড়ার লোক ছিল না, লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখে যেতে পারলে খুশি হতে তিনি।
স্মরণসভায় অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, ‘সাবিহ শেষ দিন পর্যন্ত দেশ ও দশের কথা ভেবেছেন। তার মধ্যে স্বার্থপরতা ছিল। দেশপ্রেমের প্রশ্নের কোনো আপোষ তিনি করেননি। বাংলাদেশে খুব মানুষই পাবে যে, আপন স্বার্থ ভুলে দেশ ও জনগনের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা। তিনি সব সময়ে এটা লালন করেছেন।
প্রয়াত সাবিহ উদ্দিন বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ওপরে স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ সম্পাদক শফিক রেহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মাহফুজ আনাম, এবিএম শাহেদ আখতার, প্রয়াত সাবিহ উদ্দিন আহমেদর ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ অবসরপ্রাপ্ত কুটনীতিক, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকগণ। প্রয়াত সাবিহ উদ্দিনের সহধর্মিনী রওনক আহমেদ, ছেলে সাইয়াব আহমেদ, বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগমসহ নিকট স্বজনরাও ছিলেন স্মরণ সভায়।
উল্লেখ, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবিহউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হন সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। ২০০১ সালে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরই সাবিহউদ্দিন আহমেদ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ছিলেন।