স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিএনপির চেয়ারসনের উপদেষ্টা ও
সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বলেছেন, ‘কমিটিগুলো এক ব্যক্তি বিশেষের পকেটের পুতুল কমিটি হলে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আমরা ভেসে আসিনি।’ তার এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভাইরাল হয়েছে সামাজিকমাধ্যমে। তোলপাড় চলছে। এতে হতবাকও হয়েছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভা ও জুলাই বিপ্লবে চিকিৎসা সেবার অবদানের জন্য চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আরিফ। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), সিলেট জেলা শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ড্যাব সিলেটের সভাপতি ডা. মো. নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার।
ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠালগ্নের একজন। শুরু থেকে দলে আজকে এই পর্যায়ে এসেছি। কিন্তু জাসদ, আওয়ামী লীগ, বাসদ, ন্যাপ-ট্যাপের হায়ার করা সদস্যদের কাছে যারা-ছাত্রদল থেকে এই পর্যন্ত এসেছে তারা হয়ে গেছে বিষফোঁড়া।
’
তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনে সবপর্যায়ে কত বছর জেল খেটেছি সেগুলো বলার দরকার নাই। কিন্তু এখন যে কমিটিগুলো হচ্ছে তা যদি এক ব্যক্তিবিশেষের পকেটের পুতুল কমিটি হয় তাহলে এটিকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’ ক্ষুব্ধ আরিফ বলেন, ‘এতদিন বলিনি, কিন্তু এখন মুখ খুলে বলব। ভেসে আসি নাই আমরা।’
দলকে পকেটস্থ করতে চাওয়াদের ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা দলকে এভাবে পকেটস্থ করতে চায়, যারা জাসদ করে, কর্নেল তাহেরের গ্রুপ করে জিয়াউর রহমানের চামড়া দিয়ে জুতা বানাতে চাইত-তারাই এখন জাতীয়তাবাদী দলে প্রেসক্রিপশন করে কে কোথায় নেতৃত্ব দেবে-ধিক্কার দেই এসব কাজকে।’
মুখ বুঝে বসে থাকার দিন শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণবাহিনীর নেতা, জাসদ করেছেন আর বিএনপিকে এখন প্রেসক্রিপশন দেবেন-কে হবে এখানের নেতা? আমরা আর মুখ বুঝে বসে থাকব না।’
দুর্দিনের সৈনিকদের খবর কয়জনে নিয়েছেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলীসহ অনেকে গুম হয়েছেন। কয়জনের খবর আমরা নিয়েছি? আজকে কোথা থেকে একেকজন আসছে, ব্যবসায়ী ধরে ধরে নিয়ে আসছেন, প্রশাসনিক আমলাদের ধরে ধরে নিয়ে আসছেন আর উনারা এখন বসেছেন-কে হবেন সিনিয়র সচিব, কে হবেন পরবর্তী সরকারের পিএস। আরে ভাই গভমেন্ট করা তো দূরের কথা, আগে দল সংগঠন করেন।’
দলে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদিদের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবেন জানিয়ে আরিফুল হক বলেন, ‘আমি গত মঙ্গলবার স্ট্যান্ডিং কমিটির অনেক নেতাদের সোজাসুজি বলে এসেছি-যদি আপনারা এগুলো শুদ্ধ না করেন, দল আমরা করেছি, দলে থেকেই দলের ভেতরে ঘাপটি মারাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলবই। নিশ্চয়ই নেতার কানে আমরা পৌঁছানোর চেষ্টা করব। ’
হাসিনা সরকারের পতন হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি মন্তব্য করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি-আমরা কি শঙ্কামুক্ত? প্রশ্নটা আমার এখানে। দ্বিতীয়ত আমাদের ভাবটা এমন হয়ে গেছে যে আমরা ক্ষমতায় চলে এসেছি। কিন্তু বুঝা উচিত এখন দিল্লি বহুদূর।’
দলের ভেতর বৈষম্য দূর হয়েছে কিনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা আজকে কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু দলের মধ্যে থেকে বৈষম্য দূর হয়েছে কি?’ কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দলের এখনো যে বৈষম্য আছে তার বিরুদ্ধে আপনারা কি অবস্থান নেবেন, কারণ আমরা মফস্বলে থাকি। মফস্বল থেকে কেন্দ্রের যারা নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাদের এটি দেখতে হবে।’
খোলস বদলকারীদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে আরিফুল হক বলেন, ‘আজ থেকে কিছুদিন আগেও যাদের দেখিনি পটপরিবর্তনের পর তাদের খোলস পরিবর্তন হয়েছে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতায় লেগেছি, অথচ যারা মাঠে ময়দানে আন্দোলন করল, যারা চলে গেল, যারা নির্যাতিত হলো, যারা আজও মামলায় হাজিরা দিতে দিতে জীবন শেষ করে ফেলছে তাদের প্রতি আমরা কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছি সেটা আমাদের চিন্তা করা দরকার।’
রাজপথের সৈনিকদের মূল্যায়ন হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ১০ বছর চাকরিতে পাননি তাদের এখন কয় ধাপ প্রমোশন দিয়ে কোন পদে বসাবো তাতে ব্যস্ত আমরা। দলের যারা মাঠে ময়দানে কাজ করেছে, তাদের কি অবস্থায় রেখেছেন?’
তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সবাই শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক, আর সবাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের এই আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করছেন। তারা আবার সেই ইস্ত্রি করা স্যুট-কোর্ট পরে ব্যস্ত। অবস্থা এমন যেন যারা রাজপথে ছিলে তারা এখন চলে যাও।’
সিলেট মহানগর বিএনপির কাউন্সিলের ২০ মাস পর ঘোষণা করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে ১৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে ২০২৩ সালের ১০ মার্চ কাউন্সিলরদের ভোটে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন। গত জুলাইয়ে নাসিম হোসাইনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আবারও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।