সবুজ সিলেট ডেস্ক
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ও জিকে গাউছসহ সাত আসামি। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেন।
শুনানি শেষে আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আবুল হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী জয়নাল আবেদীন বলেন, মঙ্গলবার আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গাউছ ও কারাগারে থাকা ৫ জন আসামি হাজিরা দেন। এরমধ্যে ৬ জন সময় চেয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন। মামলার আরেক আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও অবগতিপত্র পাঠিয়েছেন।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের জামিন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার।
এরই মধ্যে সিলেটের আদালতেই ছয় বিচারকের হাত বদল হয়েছে মামলাটি। বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার কার্য চলছে।
এর আগে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মমিনুল্লাহ, মনির আহমদ পাটোয়ারী, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামী, দিলীপ কুমার দেবনাথ, মকবুল আহসানের আদালতে গিয়েছিল মামলাটি।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীও এ ঘটনায় নিহত হন।
গুরুতর আহত হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। এছাড়াও আহত হন প্রায় ৭০ নেতাকর্মী। এখনো তারা আঘাতের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার পরদিন ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় সিআইডি। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। এরপর ২০০৭ সালে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আবারও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ তৎকালীন পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া (জিকে গউছ), হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়াসহ আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মাওলানা শেখ আবদুস সালামকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ জুন দুপুরে দিরাইয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় এক যুবলীগকর্মী নিহত ও ২৯ জন আহত হন। ওই ঘটনায় দিরাই থানায় করা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় আরিফুলসহ ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে ওই দুটি মামলায় আরিফুলকেও গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে ওই মামলা থেকেও জামিনে আছেন তিনি।