ইসলামপুরে পাইকারি বেচাকেনা শেষে জমে উঠেছে খুচরা বাজার

3

অনলাইন ডেস্ক: ঈদের বাকি কয়েকদিন। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নগরীর মার্কেট, শপিংমল, বিপণীবিতানগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। তবে ভিন্ন চেহারা দেশের কাপড়ের বৃহত্তম পাইকারি বাজার ইসলামপুরে। সেখানে পাইকারি বেচাকেনা প্রায় শেষ। তবে এর মাঝেও কিছুটা ব্যতিক্রম ইসলামপুরের নবাববাড়ি মার্কেট। এখানে খুচরা বেচাকেনা চলছে ঈদের আগের এ সময়েও। এ মার্কেটে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন কেনাকাটা করতে। তুলনামূলক কম দামে কাপড় পাওয়া যায় বলে এ মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের থান কাপড়ের ৬০ শতাংশ এবং বিদেশি থান কাপড়ের ৪০ শতাংশ চাহিদা ইসলামপুর থেকে পূরণ হয়। এ কারণে পাইকার বা ব্যবসায়ীরা সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন এখানে। অন্যদিকে এসব কাপড় খুচরা কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে নবাববাড়ির এ মার্কেটে।

সরেজমিনে নবাববাড়ি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগ মুহূর্তে চলছে বেচাকেনা। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে রঙ-বেরঙের কাপড়ের সমাহার এ মার্কেট। শার্ট-প্যান্ট থেকে শুরু করে কোট-ব্লেজার, পাঞ্জাবি-পায়জামা, মেয়েদের জামার কাপড় ও থ্রি-পিছের জন্য বিখ্যাত এ মার্কেট। এছাড়া শাড়ি, লুঙ্গির বিপুল সমাহারও রয়েছে এখানে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এ মার্কেটে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয় পবিত্র শবে বরাতের পর থেকে। পাইকারদের মতো বাড়তি প্রস্ততি নিতে হয় ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে পাঞ্জাবির সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন্ড সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি। মানভেদে সিকোয়েন্স কাপড় প্রতি গজ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। একটি পাঞ্জাবি তৈরিতে আড়াই গজ কাপড় নিলে সব মিলিয়ে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া পাঞ্জাবির জন্য চিকেন কারী কাপড় প্রতি গজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায়। মাল্টি চিকেন কাপড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি গজ ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া তুলনামূলক কম দামে পাকিস্তানি গজ কাপড় ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবির জন্য চায়না কাপড় প্রতি গজ ১২০ ও থাইল্যান্ডের ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জাকির ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, ১৫ রমজান পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হয়েছে। এখনো কাস্টমাররা আসছে। পাঞ্জাবির কাপড়ের ব্যবসা করছি ১০ বছর। এখন ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবির পাশাপাশি কাটা কাপড়ের পাঞ্জাবির চাহিদা ভালো। এ মার্কেটে নানান বৈচিত্র্যময় কাপড় রয়েছে যেগুলো সব বয়সী মানুষের জন্য মানানসই।

তিনি বলেন, আগে শুধু মাদরাসার ছাত্ররা গজ কাপড় কিনে পাঞ্জাবি বানালেও এখন সবাই নানান রঙের প্রিন্টের কাপড়ের প্রতি ঝুঁকছে। এ বছর চিকেন কারী, সিকোয়েন্স পাঞ্জাবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে পুরুষদের পাঞ্জাবির পাশাপাশি ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ শার্ট-প্যান্ট। শার্ট-প্যান্টের জন্য দেশি কাপড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি গজ ২৫০- ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ভারতীয় কাপড় প্রতি গজ সর্বনিম্ন ৩৫০ থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

আল আকসা ফেব্রিকসের জসিম উদ্দীন জানান, এবার শার্ট প্যান্টের কাপড়ের চাহিদা কম। শবে বরাতের পর ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আমাদের সারা বছর বেচাকেনা হয়। বিশেষ করে যারা অফিস করেন, চাকরিজীবী- তারা শার্ট-প্যান্ট বানান। এছাড়া কোট বানানোর কাপড়ও রয়েছে।

* গজ কাপড়ের সমাহার নবাববাড়ি মার্কেটে
* সুলভ মূল্যে মেলে দেশি-বিদেশি কাপড়

ইসলামপুর থ্রি-পিসের জন্যও বিখ্যাত। তবে কম দামে খুচরা কেনার জন্য আসতে হয় নবাববাড়ি মার্কেটে। মানভেদে ৩০০ থেকে শুরু করে ৩৫০০ টাকার থ্রি-পিস রয়েছে এ মার্কেটে। সুতি, লিলেন, জর্জেট, অর্গানজা, বাটিক, কটনসহ বাহারি ধরনের আনস্টিচ থ্রি-পিস রয়েছে।
মামুন থ্রি-পিস ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মামুন খান বলেন, আমাদের এখানে রেডিমেড কোনো থ্রি-পিস নেই। সব আনস্টিচ। যেহেতু এখান থেকে কিনে আবার শেলায় করা লাগে, তাই ১৫ রমজান পর্যন্ত বেশি বেচাকেনা হয়েছে। তবে নতুন মাসের শুরুতে স্যালারি পেয়ে অনেকে আসছে। এখানে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ প্রায় সব এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন।
এছাড়া দোকানগুলোতে গজ কাপড়ের মধ্যে বাটিক প্রতি গজ ১০০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির সুতি কাপড় পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকায়।
ঢাকার আজিমপুর থেকে আসা মালিহা তাবাসসুম বলেন, এখানে কম দামে ভালো থ্রি-পিছ পাওয়া যায় তাই এলাম। জর্জেটের মধ্যে পাথর, পুঁতি দিয়ে নকশা করা একটি জামা নিয়েছি ১৫০০ টাকা দিয়ে। যেটা অন্যান্য মার্কেটে ২২০০/২৫০০ এর নিচে নাই।
তবে গতবারের চেয়ে কাটা কাপড়ের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। শার্ট-প্যান্টের কাপড়ে গজ প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কথা হয় নিরব কালেকশনের বিক্রেতা সাত্তারের সঙ্গে।
তিনি জানান, সরকার ভ্যাট বসিয়েছে। ইন্ডিয়ান কাপড়ে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে। সরকার যে পরিমাণ ভ্যাট বসিয়েছে, প্রতি গজে দুয়েক বছরের চেয়ে ১০০ টাকা পার্থক্য হয়ে গেছে।