ওসমানীনগরে চড়ক উৎসব সম্পন্ন

7

উজ্জ্বল দাশ, ওসমানীনগর (সিলেট): সিলেটের ওসমানীনগরে সনাতন ধর্মালম্বলীদের ঐতিহ্যবাহি চড়ক উৎসব অনুষ্টিত হয়েছে। উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউপির পুরকায়স্থ পাড়া গ্রামের প্রয়াত বাটুল মালাকারের পুত্র রন মালাকার প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করেছেন চড়ক উৎসবটি। লোকনাথ জায়রেক্টরী পঞ্জিকা মতে ৫ বৈশাখ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় চড়ক পুজাটি।
জানা যায়, এই পুজার মুল আকর্ষন থাকে ৬/৭ জন সন্ন্যাসীর বড়শিবিদ্ধ হয়ে শুন্যে ঘোরা। বড়শিতে গাথা জল জ্যান্ত তাজা মানুষ। চড়ক গাছে ঝুলিয়ে প্রায় ২৫ ফুট শুন্যে ঘুরাতে ঘুরাতে সন্ন্যাসীরা ছুড়ে দিচ্ছেন বাতাসা আর কলা। নয় একে একে ৬ সন্ন্যাসী পিঠে বড়শী বিধে শূন্যে ঘুরে পালন করলেন শিব পুজারই অংশ চড়ক উৎসব। এই দৃশ্য দেখতে এলাকার প্রায় দুই শহস্রাধিক লোক জড়ো হয়েছেন। এ পুজাকে ঘিরে যেনো মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। চড়ক মেলার মুল আকর্ষন বড়শিবিদ্ধ হয়ে শুণ্যে ঘোরানো এ দৃশ্য অবলোকনের সাথে সাথে মেলায় কেনা কাটা করতে সকাল থেকে হাজির হন এ অঞ্চলের হাজার হাজার নারী-পুরুষ। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। চারিদিকে সাজ সাজ রব। পুরো এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ। বিকাল ৩ টার দিকে ৬ জন সন্ন্যাসী পার্শ্ববর্তী পুকুরে স্নান করেন। এরপর ৬ জন সন্ন্যাসী মাটির কলসে জল (পানি) ভরে মাথায় নিয়ে আসেন তাদের চড়ক গাছের কাছে। সাড়ে ৩টার দিকে সন্যাসীদের পিঠে দুটি বড়শী বিদ্ধ করা হয়। এ সময় স্মরণ করা হয় মহাদেব শিব ঠাকুরকে। এরপর সন্যাসীদের ১০/১৫ জন পুরুষ ধরাধরী করে ঝুলিয়ে দেন চড়ক গাছে। অপর গাছের অপর প্রান্তে থাকা কপিকলের বাঁশ জোরে জোরে ঘোরাতে থাকেন ২০/২৫জন যুবক। চড়ক গাছে লটকে দেওয়ার সাথে সাথে কিছু মহিলা তাদের শিশু সন্তানকে তুলে দেন সন্ন্যাসীদের হাতে। তাকে নিয়েই শুন্যে ঘুরতে থাকেন সন্ন্যাসীরা আর এ অবস্থায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা আর কলা।
এভাবেই দীর্ঘক্ষন বড়শীতে বিধে শুণ্যে ঘুরে নেমে আসেন সন্যাসীরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১২ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসছে এ চড়ক পুজা। আর এ পুজাকে ঘিরে স্থানীয় বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে বসে দিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা।

সন্যাসীরা জানান, সবাই চড়ক গাছে উঠতে পারে না। এতে সাহস লাগে। শিব ঠাকুরের সন্তুষ্টির জন্যই তারা প্রতি বছর চড়ক গাছে চড়ে থাকেন। শরীরে বড়শী বিধার ফলে বড় ধরণের ক্ষতের সৃষ্টি না হলেও সামান্যই রক্ত বের হয়। কিন্তু এর জন্য কোন ঔষধ লাগে না। চড়ক গাছ থেকে নামিয়ে গাছের গোড়ায় থাকা সিঁদুর টিপে দিলেই হয়।
পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই তারা মহাদেবের ভক্ত এবং এ কাজ করে আসছেন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, এ পুজাকে ঘিরে বসে দিনব্যাপী জমজমাট মেলা। লোকজ ঐতিহ্যের হরেক রকম পসরা সাজিয়ে দোকানীরা বেচাকেনা করছেন।
মিষ্টির দোকানী রমজান আলী (৪৫) ১০/১২ রকমের মিষ্টি সাজিয়ে বিকিনিকি করছেন। তিনি এবার সপ্তম বারের মত মেলায় আসলেও বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে বলে জানান।
সাখা-সিঁদুর বিক্রেতা বিমল সরকার ও বিকিনিকি করছেন তার পণ্য সম্ভার।
পূজার আয়োজক রন মালাকার বলেন, স্বপ্ন আদেশে দীর্ঘ ১ যুগের অধিক যাবত আমি এ পুজার অয়োজন করছি।চড়ক পুজা মুলত শিব পুজারই অংশ বিশেষ। নানা আনুষ্ঠানিকতায় তা সম্পন্ন করা হয়। গত একমাস যাবত আমিসহ সন্যাসীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবাইকে নিমন্ত্রনের পাশাপাশি সকলের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা নিয়েছি। তিন দিন যাবত আমরা নির্জলা উপবাস করে গতকাল(বুধবার) রাতে শশ্মান কালি পুজা ও কালি নাচ করেছি। আজ(বৃহস্পতিবার) শিব পুজা ও চড়কগাছে সন্যাসীদের ঘোরানোর মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ মিলন মেলা।